অরণ্য থেকে অন্তর্জালে, রাঙা মাটির পথ থেকে রাজপথে

আদিম অন্যতার জমিন ঘুরে দেখা

এই লেখাটিতে পাখির চোখে দেখে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে আদিবাসী জীবনের উপস্থাপনা সম্বলিত পরিসর বা ‘আদিম অন্যতার জমিন’। পরিসরটিকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিদের চোখ দিয়ে, যাদের কাছে আদিবাসীরা একাধারে ‘আদিম’ ও ‘অন্য’। একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক – কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতার অংশবিশেষ:[১]

গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বাক-চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!-

উপরের উদ্ধৃতাংশের তৃতীয় পংক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সুপরিচিত একটি স্লোগানের কথা, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান, বাংলার খ্রিস্টান – আমরা সবাই বাঙালি।’ অন্যদিকে, শেষ দুই পংক্তিতে যেসব নাম রয়েছে, সেগুলো ‘বাঙালি’ গণ্ডীর বাইরে: একদিকে পার্সী, জৈন, ইহুদী, কন্‌ফুসিয়াস, চার্বাক-চেলা প্রভৃতি ধর্মীয় সম্প্রদায়; অন্যদিকে সাঁওতাল, ভীল ও গারো, এই তিনটি জাতি, বাঙালিদের কাছে যাদের পূর্বপরিচিতি ছিল আদিবাসী  বা আদিম হিসাবে। নজরুল অবশ্য উল্লিখিত সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের অভিন্ন মানবতার উপরই জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করা বাংলাদেশের প্রধান জাতীয়তাবাদী ধারাগুলো আবর্তিত হয়েছে একদিকে বাঙালিত্বের জয়গানে, আরেকদিকে মুসলমান পরিচয়কে এগিয়ে রাখার মাধ্যমে। এই দুটি ক্ষেত্রের কোনটাতেই আদিবাসীরা নিজেদেরকে খুঁজে পায় না। এই ধারাবাহিকতারই অংশ ছিল শাহবাগের গণ জাগরণ মঞ্চে ওঠা সেই বিতর্কিত স্লোগান, “তুমি কে, আমি কে? বাঙালি, বাঙালি”।

নিবন্ধের প্রেক্ষাপট ও কাঠামো নিয়ে দুটি কথা বলে নেই। শিরোনামের পদগুলি – অরণ্য, অন্তর্জাল, রাঙা মাটির পথ, রাজপথ – খুব একটা ভেবে চিন্তে বাছাই করা হয়নি, তবে মাথায় খেলা করছিল বিগত আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে এক নাগাড়ে কয়েকটি লেখায় হাত দিতে গিয়ে, যেগুলির সব শেষেরটার সংক্ষিপ্ত রূপ হল বর্তমান নিবন্ধ (বাকীগুলির মধ্যে দুইটি নিবন্ধ এবং একটি গল্প ছাপা হয়েছে এই ব্লগে)। মূল ভাষ্যটি লিখেছিলাম ‘হুচ’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিনের জন্য, যাতে উল্লিখিত পদগুলিকে সীমানা খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করে এঁকেছিলাম এক নজরে আমার দেখা আদিম অন্যতার জমিনের মানচিত্র। বিভিন্ন কারণে হুচের প্রকাশনা বিলম্বিত হয়ে যাওয়াতে লেখাটির একটা সংক্ষিপ্ত ভাষ্য এখানে ছাপা হল।

অরণ্য

বাঙালি মানসে ‘আদিবাসী’ পরিচয় আর ‘অরণ্য’ মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে। যেমন, এক সময় বাংলাদেশে গড়পড়তা শিক্ষিতজনদের জন্য আদিবাসীদের সম্পর্কে জানার প্রধান উৎস ছিল আবদুস সাত্তারের লেখা ‘আরণ্য জনপদে’, ‘আরণ্য সংস্কৃতি’, ‘আরণ্য প্রেম’ প্রভৃতি বই। আবার পড়াশোনার ব্যাপ্তি ও গভীরতা রয়েছে, এমন বাঙালিদের মধ্যে আদিবাসীদের সংগ্রাম সম্পর্কে সংবেদনশীলতার পাঠ নেওয়ার একটি প্রধান উৎস হল মহাশ্বেতা দেবীর ‘অরণ্যের অধিকার’।  অবশ্য বাঙালি মানসে আদিবাসী বলতে ‘আরণ্য জনপদ’ বোঝালেও, ‘অরণ্য’ মানেই যে সবসময় আদিবাসী-অধ্যুষিত ভূমি বোঝায়, তা নয়। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় যে অরণ্য ফেরত চেয়েছেন, সেখানে রয়েছে তপোবন, গোচারণ, সামগান প্রভৃতি।[২] যে কাব্য-ভূমির বিলুপ্তি নিয়ে কবিগুরুর হাহাকার, তা যতটা না অরণ্য, তার চাইতেও আসলে একটি সামন্ত জনপদ, যা সম্ভবত আর্যাবর্তেরই অংশ, যেখানে কোন ‘অনার্য’ আদিবাসীর উপস্থিতি চোখে পড়ে না।

1. Books

প্রাসঙ্গিক কিছু বইয়ের প্রচ্ছদ। শেষের দুইটি মহাশ্বেতা দেবীর অরণ্যের অধিকারের উপর লেখা। উৎস – ইন্টারনেট

আসলে, সে অর্থে কোন মানব সমাজই ঠিক অরণ্যে বাস করে না। বাইরের মানুষদের চোখে অরণ্যবাসী, এমন সমাজের লোকেরাও নিজেদের বেলায় একটা ভেদ রেখা মেনে চলে অরণ্য এবং লোকালয়ের মধ্যে। অথচ আদিবাসী মানে ‘প্রকৃতির সন্তান’, ‘অরণ্যের অধিবাসী’ – এমন দৃষ্টিভঙ্গীর ধারক-বাহক-প্রবক্তারা সচরাচর এই মৌলিক বিষয়টা খেয়াল করেন না। অন্যদিকে ‘অরণ্যলালিত আদিবাসীরা সহজ-সরল-অনাড়ম্বর জীবনে পরিতৃপ্ত’ এমন ধ্যান ধারণা এখনো অনেকাংশে বহাল থাকলেও বাস্তবে দুই শতাধিক বছর হল, বনাঞ্চলের অধিবাসীদেরকে টিকে থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হিংস্রতার সাথে লড়াই করে। এখানে আমরা বাঘ ভালুকের কথা বলছি না। বলছি ‘বাজার’ ও ‘রাষ্ট্র’ নামক পৃথিবীর ইতিহাসের দুইটি চিড়িয়ার কথা, যেগুলো অনেক কিছু গিলে খেয়েছে, খেয়ে চলছে!

রাঙা মাটির পথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গানে ‘গ্রামছাড়া যে রাঙা মাটির পথ’ মন ভুলিয়ে দেয়, তা কোন আদিবাসী পল্লীর সাথে যুক্ত কিনা বোঝার উপায় নেই। তবে কাজী নজরুল ইসলামের ‘এই রাঙামাটির পথে লো’ গানে যখন মাদল আর বাঁশি বেজে ওঠে, মহুয়ার বনে চাঁদের মাতাল হাসি লুটিয়ে পড়ে, তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে আমরা একটা আদিবাসী জনপদে – সুস্পষ্ট করে বললে ‘সাঁওতাল’ এলাকায় – আছি।[৩] নজরুল ছাড়াও আরো বেশ কিছু বড় মাপের বাঙালি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী সাঁওতালদের জগতকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁদের সৃজনশীলতার প্রেরণা, পটভূমি বা বিষয় হিসাবে। সে সূত্রে মাদলের তাল, বাঁশির সুর আর হাড়িয়ার মাদকতা সহযোগে নৃত্যগীত-উৎসবে মেতে থাকা সাঁওতাল নারী পুরুষদের যুথবদ্ধ জীবনের একটা রোমান্টিক প্রতিচ্ছবি অনেকের মানসপটের গভীরে আঁকা আছে, যা তাদের কাছে আদিম সারল্যের প্রতিমূর্তি, বা সুদূর অতীতে ফেলে আসা কোন পূর্বতন সত্তা বা ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছায়া। এ ধরনের রূপায়ণে ইতিহাসের কোন প্রতিফলন নেই, নেই বাস্তব জীবনের বৈষম্য, নিপীড়ন বা প্রতিরোধের কোন ছাপ।  যদি প্রতিরোধের চিত্র কখনো উঠেও আসে, তা সচরাচর আটকে থাকে ঐতিহাসিক স্থান-কাল-পাত্রের উর্ধে একটা চিরন্তন ছকে।

2. J Abedin's Santal women

জয়নুল আবেদীনের  চিত্রকর্ম ‘সাঁওতাল রমণী’ (ইন্টারনেট থেকে)

শিল্প বা সাহিত্যের আদিবাসীরা তীর-ধনুক দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, যদিও বাস্তবে তাদের সমকালীন প্রতিনিধিদির অনেকের হাতে একে-৪৭-এর মত অস্ত্রও দেখা গেছে! অর্থাৎ বিভিন্ন মাধ্যমে শিল্পীদের চিত্রায়নে আদিবাসী জীবনের যে ছবি তুলে ধরা হয়, বাস্তবতার সাথে তার খুব কমই মিল দেখা যায়।  সংস্কৃতির এ ধরনের উপস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার আলোকে, যেক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল ২০১০ সালের ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন’, যার মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে ‘উপজাতীয়’ শব্দটির বদলে বসে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’। একই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয় ‘২৩ক’ ধারা, যার মাধ্যমে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের’ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও বিকাশের দায় রাষ্ট্রের উপর এসে বর্তায়।

6. Santal man with bow and arro (bdnews24)

২০১১ সালের বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে banglanews24.com-এর একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি (বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কহীন)

উল্লিখিত দায় রাষ্ট্র কিভাবে মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে তার কিছু নমুনা স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল জুলাই ২০১৩-তে।[৪]  নজরুলের গান শুনে রাঙা মাটির পথে শাল পিয়াল মহুয়া বনের চন্দ্রালোকিত মদির পরিবেশে মাদলের তালে অঙ্গে ঢেউ ওঠা যে আদিবাসী নারী আমাদের কল্পনায় ধরা পড়ে – একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি সেরকম নারীর কিছু নব্য সংস্করণ শিল্পকলা একাডেমীর পিচ ঢালা রাস্তায় নাচতে নাচতে প্রধান অতিথি ও অন্যদের বরণ করছিলেন একটা অনুষ্ঠানে। আর নজরুলের গানে যে মাদল বাজতে শুনি আমরা, সেরকম কিছু বাদ্যযন্ত্র, সাথে তীর ধনুক, আদিবাসী নারীদের পরিধেয় – এসব দিয়ে সাজানো ছিল উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধিত হওয়া ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংগ্রহশালা’। শিরোনামে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ আছে, এমন একাধিক বইও ছিল সেখানে। আদিবাসীদের ‘সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’কে এভাবে ইতিহাস-বিযুক্ত সংগ্রহশালা, মঞ্চ, প্রদর্শনী মাঠ, এবং গ্রন্থে বেঁধে ফেলার আয়োজন আসলে চলে আসছে সেই পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমল থেকেই। প্রশ্ন হল, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’রা কি শুধু নাচবে গাইবে, আর সংগ্রহশালায় তুলে দেবে তাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, নাকি তারা ভূমি ও বনের উপর তাদের হারানো অধিকারও ফিরে পাবে? শেষোক্ত বিষয়ে সংবিধানের ২৩ক ধারা সম্পূর্ণ নীরব।

6. Adivasi children on Victory Day parade (PA photo)

রাষ্ট্র ও অধিপতি শ্রেণী যেভাবে আদিবাসীদের দেখতে চায় – ২০০৯’র বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ছবি (প্রথম আলো ই-আর্কাইভ)

রাজপথ

ঐতিহাসিকভাবে সামন্ত ও ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে এদেশের আদিবাসীরা রুখে দাঁড়িয়েছে বার বার। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেও তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। পরবর্তীকালে ইতিহাসের অভিঘাতে তাদের মধ্যে যারা ভূমি থেকে উৎখাত হয়ে নগরমুখী হয়েছে, হয় শ্রমিক-কর্মচারী হিসাবে, নতুবা শিক্ষার্থী অথবা ‘বাবু’ শ্রেণীর অংশ হিসাবে, তারাও অনেকে বিভিন্ন সময়ে রাজপথে নেমে এসেছে বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু আদিবাসীদের ব্যাপারে বাঙালি সমাজে প্রচলিত বদ্ধমূল কিছু ধারণা এই ‘রাজপথের আদিবাসী’দেরকে ঠিকমত তুলে ধরা বা বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে একটা বাধা হিসাবে কাজ করে। এ প্রসঙ্গে একটা ছোট উদাহরণ দেব আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে।

রাঙামাটির লংগদুতে ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে একটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর তার প্রতিবাদে ২১ মে তারিখে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের একটা অভূতপূর্ব প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথে। সেই মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে, তখন আমি একটা ‘কবিতা’ লিখে ফেলেছিলাম, যা পরবর্তীতে ‘নির্বাসিত শব্দমালা’ নামে একাধিক জায়গায় (এই ব্লগেও) ছাপা হয়েছে। সেটি শুরু হয়েছে এভাবে:

হে আমার নির্বাসিত শব্দমালা –
মিছিলের শত শত আলোড়িত হৃদয়ে তোমাদের ডাক এসেছে।
শতাব্দীর বঞ্চনার বিস্ফোরণোন্মুখ ক্ষোভে তোমরাও হও শামিল।

মজার ব্যাপার হল, অন্তর্জাল ঘাঁটতে গিয়ে কয়েকমাস আগে আমি হঠাৎ আবিস্কার করলাম, আমার কথাগুলির সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা করে বসে আছেন এম এ মোমেন নামে একজন, যিনি প্রথম আলোতে প্রকাশিত তাঁর এক লেখায় ‘নির্বাসিত শব্দমালা’ বলতে বুঝেছেন ‘আদিবাসীদের বিপন্ন ভাষা’, এবং আমি এ নিয়ে হাহাকার করলেও তা যে প্রকাশ করছি বাংলায়, এ কথা ভেবে বিষন্ন আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।[৫]

5. Santal rebellion seminar photo

‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ স্মরণে , ৩০ জুন, ২০১৩, প্রথম আলো ব্লগ

বিগত দুই দশক ধরে ‘শহুরে আদিবাসী’রা নিয়মিত রাজপথে থাকলেও তাদের এই উপস্থিতি অনেক সময় দৃষ্টির আড়ালেই থেকে গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, এবং আরো বেশী করে শিল্প-সাহিত্যে। পক্ষান্তরে, ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ জাতীয় অনুষ্ঠানে, বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে, আদিবাসীরা যখন ‘ঐতিহ্যবাহী’ (আদি/ম) সজ্জায় হাজির হয়, তাদের উপস্থিতি সবার নজরে পড়ে, প্রশংসা কুড়ায়। এভাবে চলতে থাকে স্থান-কাল নিরপেক্ষ ভাবে বিশেষ ছাঁচে জনপরিসরে আদিবাসীদের উপস্থাপিত হওয়ার, বা স্ব-উপস্থাপনার, ধারা।

অন্তর্জাল

এখানে অন্তর্জাল[৬] বলতে বোঝানো হচ্ছে ‘ইন্টারনেট’কে, যেখানে সমাজে বা রাষ্ট্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায়, আবার অনেকে নূতন রূপে নিজেদের ছায়াসত্তা বা প্রতিসত্তা তৈরি করছে। আমাদের আলোচনার যে জমিন, ‘আদিম অন্যতা’, তাও সেখানে তৈরি হচ্ছে নূতন রূপে। আর অন্তর্জাল যেমন আদিবাসীদের জন্য হয়ে উঠছে নিজেদের তুলে ধরার এবং প্রতিপক্ষদের মোকাবেলা করার নূতন সীমান্ত, তেমনি অন্যরাও যে যার মত করে মাঠে রয়েছে আদিম অন্যতার জমিনে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠায়, যার যার মতাদর্শিক, ব্যবসায়িক বা অন্যান্য স্বার্থের অনুকূলে।  এসবের প্রেক্ষিতে কিছু বিষয় বিশেষ মনোযোগের দাবী রাখে। যেমন, আদিবাসীদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার অন্তর্জালে দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা মোকাবেলা করতে হবে পরিকল্পিতভাবে, বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে। আর এক্ষেত্রে অন্তর্জাল একটা সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ব জুড়ে মিত্রতা ও সহযোগিতার নূতন সম্পর্কজাল তৈরি করতে। তবে আমি মনে করি সে সুযোগ ঠিকমত কাজে লাগাতে গেলে ‘আদিবাসী’ পরিচয়কে ‘আদিম অন্যতা’র নিগড় থেকে বের করে নিয়ে এর সার্বজনীন আবেদনকে সামনে নিয়ে আসতে হবে, অর্থাৎ সমকালীন প্রেক্ষাপটে ‘আদিবাসী’ পরিচয়কে নূতন অর্থ ও মাত্রা দিতে হবে। বিষয়টা আমি একটু ব্যাখ্যা করব আমার নিজের সাম্প্রতিক একটা উপলব্ধির আলোকে। আমি ‘আদিবাসী’ শব্দটা নিয়ে ছোট বেলায় কখনো খুব বেশী মাথা ঘামিয়েছিলাম বলে মনে পড়ে না। তবে কিশোর বয়সে লেখা নিজের একটা কবিতায় আমি এটা খুঁজে পেয়েছি। ‘ওপার’ নামের এই কবিতার শুরুটা এরকম:

এই মাঠটাকে হঠাৎ, কাজ করতে করতে
মনে হল বড় বেশি ফাঁকা, ধু ধু –
চলে গেলাম নদিটার ওপাশে,
ওই পারের সবুজ বনে, নীল পাহাড়ে।

সেখানে আমি গত দিনগুলিতে
ফসল ফলিয়েছি,
গতকালও আমি আদিবাসী ছিলাম –
সেখানে জুমচাষ করেছি।

[ঢাকা, ১৯৭৯]

যে সময় আমি কবিতাটা লিখেছিলাম, তখন আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার, এই দুটি ভূমিকার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া, যেভাবে সময় ও পরিপার্শ্ব ঠিক করে দিয়েছিল। সে অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বুয়েটে ঢুকলাম তড়িৎ প্রকৌশলী হওয়ার চিন্তায়। সেখানে একটা ছাত্র সংগঠনে যোগ দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়া, রাত জেগে পোস্টার লেখা, ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে বছরখানেক জড়িত থাকার পর হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম একটা বৃত্তি, তাও আবার এমন একটা দেশে, যেটির কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে স্লোগান দিতাম! আমি যে দল করতাম, সেই দলের নেতা, যিনি এখন গার্মেন্টস কারখানার মালিক বলে শুনেছি, এ নিয়ে ভীষণ ক্ষুন্ন হয়েছিলেন। যাহোক, বিদেশে পাড়ি দিলাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী হবার চিন্তা করে…কিন্তু আট বছর পরে ফিরে এলাম অর্ধপক্ক এক নৃবিজ্ঞানী হিসাবে। সেটা আরেক কাহিনী, তবে এখানে এটুকু বলা যায়, নৃবিজ্ঞান পড়া ছিল আমার জন্য আত্নানুসন্ধানের অংশ, যা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমি শুরু করেছিলাম নিজের আত্নপরিচয়ের পরতগুলো খোলার কাজ। তা করতে গিয়ে আবিস্কার করলাম, যেভাবে নিজেকে চিনতে শিখেছিলাম, তার আড়ালে রয়েছেন বাঙালি ‘বাবু’ শ্রেণীর আরাধ্যজনেরা – রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ। সেই পরত খুলতে গিয়ে আবিস্কার করলাম ‘পশ্চিমা’দের – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে শুরু করে বার্ট্রান্ড রাসেল, মার্ক্স, ফ্রয়েড, কত কি। সেই উন্মোচনের প্রক্রিয়া এখনো চলছে!

3. Adivasi Mela Cox's Bazar photo

কক্সবাজার সৈকতে ‘আদিবাসী মেলা’য় নৃত্য পরিবেশনার ছবি, কালের কণ্ঠ, ১৫ জানুয়ারি ২০১১ (গত বছর এমন অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে  ফেসবুকে অনেকে সোচ্চার হয়েছিলেন )

উপরে যে কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, তা ফেসবুকে দেওয়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আমার অনেক বন্ধু সাড়া দিয়েছিলেন – যাদের অনেকে জন্মসূত্রে আদিবাসী, কিন্তু এখন প্রবাসী; আবার কেউবা চেতনায় আদিবাসী। অন্তর্জাল আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এ ধরনের বহু বন্ধুর সাথে অন্তরের জ্বালা, এবং মনের অনেক প্রশ্ন ভাগাভাগি করে নিতে। আমার কাছে এমন কিছু প্রশ্ন হল, ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের তাৎপর্য কি? ‘আদিবাসী’ অধিকারের কথা আমরা যখন বলি, তখন ঠিক কাদের কথা ভেবে আমরা তা করি? আর যখন আমরা সোচ্চার হই বিভিন্ন সময়ে – যেমন যখন শুনি সুজাতা বা সাগরি নামের আদিবাসী নারী শিশুরা ধর্ষকদের হাতে প্রাণ দেয়, আর এই রাষ্ট্র দোষীদের খুঁজে পায় না – কিছু বিবৃতি, মানব বন্ধন, বা ফেসবুকে কবিতা, নোট ইত্যাদি পোস্ট করা, এসবেই কি আমাদের দায় শেষ? আর দায়টা কি শুধু আদিবাসীদেরই?

বাকি কথা  
‘বাঙালি মানসে আদিম অন্যতার জমিন’ কতটা বা আদৌ তুলে ধরতে পেরেছি কিনা, তা বিচারের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। এক্ষেত্রে পাঠকদের রায় যাই হোক, তাঁদেরকে অনুরোধ করব আমার লেখাটিকে একটা আলোচনার সূত্রপাত হিসাবে দেখতে। তাঁদের মধ্যে কেউ যদি সেটা চালিয়ে যেতে আগ্রহী হন, তাহলে তা হবে আমার জন্য বাড়তি পাওনা। এ প্রসঙ্গে পাখির চোখে আদিম অন্যতার জমিন দেখতে গিয়ে শুধু দূর থেকেই চোখে পড়েছে, এমন কিছু পল্লবিত স্থানের কথা উল্লেখ করছি যেগুলো আরো কাছ থেকে দেখার দরকার আছে। সেসব জায়গায় বড় মাপের গাছের মত দাঁড়িয়ে আছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সেলিম আল দীন, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

ইলিয়াসের জীবদ্দশায় আমি একবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম, তাঁর সাথে কিছু সময় কাটিয়েছিলাম, কিন্তু তাঁর ‘চাকমা উপন্যাস চাই’[৭] প্রবন্ধটা আমার পড়া হয়ে ওঠেনি এখনো। তাঁর প্রত্যাশা কি হতে পারে, এবং কেন তিনি তা উচ্চারণ করে থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে আমার একটা ধারণা আছে, তবে তাঁর লেখাটা না পড়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তাই সে প্রসঙ্গ এখন থাক। এখানে আমি বরং ইলিয়াস সম্পর্ক ফারুক ওয়াসিফের একটা মূল্যায়ন তুলে ধরছি, যা প্রাসঙ্গিক: “ক্ষুদ্র, তুচ্ছ মানুষের জীবনের শক্তি ও সৌন্দর্য যে অপার সম্ভাবনা ধরে, তাকে তিনি সাহিত্যের মধ্যে নির্মোহভাবে ফলিয়ে দেখান।”[৮] উদ্ধৃত বাক্যের উপর আমার চোখ আটকে গিয়েছিল ‘ক্ষুদ্র’ শব্দটা দেখে, যেটার সাথে সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীরা বাঁধা পড়ার পর তা এখন তাদের অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে তাদের যাবতীয় বঞ্চনা, বেদনা ও ক্ষোভের – তাদের প্রতি রাষ্ট্রের ও বাঙালি বিদ্বৎসমাজের  অবজ্ঞার – মূর্ত প্রতীক। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বেঁচে থাকলে নিশ্চয় ‘ক্ষুদ্র’ নামে আখ্যায়িত এই মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন, এ নিয়ে কলম ধরতেন। আমার বিশ্বাস, তাঁর চোখে আদিবাসীদের সংখ্যাগত ক্ষুদ্রতা নয়, বরং তাঁদের জীবনাদর্শের মহত্ত্বই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। বাঙালি বিদ্বৎসমাজের মানসিক সংকীর্ণতা, বা ক্ষুদ্রতা, অবশ্য তাঁকে নিশ্চয় অবাক করত না, যদিওবা হয়ত ব্যথিত করত, যেহেতু তিনি নিজেও এর অংশ ছিলেন।

আদিবাসীদের জন্য সাংবিধানিকভাবে বরাদ্দকৃত অন্য একটা শব্দ হল ‘নৃগোষ্ঠী’, যার সাথে জড়িয়ে আছে সেলিম আল দীনের নাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে বিভাগে পড়াতেন, সেই বিভাগের একজন শিক্ষক আমাকে গর্বের সাথে বলেছিলেন, ‘নৃগোষ্ঠী’ শব্দটা নাকি তাঁদেরই উদ্ভাবন ছিল। সেলিম আল দীন ছিলেন বাংলাদেশে ‘নিও-এথনিক থিয়েটার’ – বাংলায় নব্য নৃগোষ্ঠী নাট্য – চর্চার পথিকৃৎ বা প্রবক্তা।[৯] তার মানে বাংলাদেশের আদিবাসীরা যে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’র মত একটা খটমটে নামের সাথে বাঁধা পড়ল, এটা তাঁদেরই অবদান?  সেলিম আল দীন এখনো বেঁচে থাকলে আমি তাঁকে অবশ্যই প্রশ্নটা করতাম। যিনি মারমা রূপকথা, কেরামত মঙ্গল, বনপাংশুল প্রভৃতি নাটকের স্রষ্টা – যেগুলি জুড়ে আছে আদিবাসীদের জীবন, জগত, ‘মর্মরিত ভগ্ন অরণ্যের ভেতর উচ্চারিত রক্তাক্ত জনপদের পাঁচালি’ – তিনি নিশ্চয় শুনতে পেতেন ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ পদের মধ্যে মিশে থাকা বাঙালি উন্নাসিকতার সুর? সহজ বাংলায় বললে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’র অর্থ দাঁড়ায় ‘ছোট জাতের মানুষ’ বা ‘ছোট মানুষের জাত’ – এগুলি যদি আপত্তিকর হয় তবে তৎসম পদটা কেন হবে না?  ‘জংলি’ শব্দটা যাদের কাছে নেতিবাচক অর্থ বহন করে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গী কি পাল্টে যাবে ‘অরণ্যবাসী’ বা সেরকম কোন শব্দ চালু করা হলে?

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা সেলিম আল দীন বেঁচে নেই, কিন্তু আমাদের মাঝে আছেন মামুনুর রশীদ। তাঁর ‘রাঢ়াং’ নাটকটা ভাল করে এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি আমার, তবে এটির সম্পর্কে নীচের কথাগুলি পড়ার পর মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে এটি দেখার বা নাট্যকারের সাথে আলাপের সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে হবে:[10]

রাঢ়াং  অর্থ জেগে ওঠার জন্যে দূরাগত মাদলের ধ্বনি। আদিবাসীরা দূরাগত মাদলের ধ্বনিই শুনছে বহুকাল ধরে। কিন্তু তাদের মুক্তি নেই। ভূমির অধিকার বঞ্চিত এই আদিবাসীরা বার বার লড়াইয়ে মেতে উঠেছে। কিন্তু মুক্তি পায়নি। নাচোল বিদ্রোহ থেকে আলফ্রেড সরেনের ভূমির অধিকার লড়াই পর্যন্ত বিস্তৃত এর কাহিনী। আলফ্রেড সরেনের উত্থান ও নিষ্ঠুর হত্যায় এর পরিসমাপ্তি।

8. রাঢ়াং

রাঢ়াং-এর ১০০তম  মঞ্চায়ন, আগস্ট ৩১, ২০১১, প্রথম আলো

আলফ্রেড সরেনের মৃত্যু, বা রাঢ়াং-এর পরিসমাপ্তি, নিশ্চয় আদিবাসীদের সংগ্রামের শেষ কথা হতে পারে না। এই সংগ্রাম চলছে, চলবে। প্রশ্ন হচ্ছে, মামুনুর রশীদের নাটক, বা আপনার আমার দু’একটি কবিতা, বা মানব বন্ধন – সেগুলোর আয়োজন যত আন্তরিকভাবেই করা হোক, এগুলো কি ঠেকিয়ে রাখতে পারবে বাংলাদেশের মাটি থেকে খুমিদের নীরব প্রস্থান, বা বিশেষ কোন উচ্চবাচ্য ছাড়া চাকদের গ্রামছাড়া হওয়া? এই ঘটনাগুলো যে ঘটছে, বাংলাদেশের কয়জন মানুষ খবর রাখে? কারা এই খুমি বা চাক? তারা হল ক্ষুদ্রদের মধ্যেকার ক্ষুদ্রতম নৃগোষ্ঠী। মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে, কারো চাইতে তাদের অধিকার কম নয়। তবে তার বাইরেও তাদের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের উচ্চতার সর্বোত্তম পরিমাপক কি হতে পারে? আমার কাছে এর উত্তর হল: খুমি, চাক বা মান্দাইদের মত জাতিদের টিকে থাকা না থাকা, ভাল থাকা না থাকা – এদেশের সাহিত্যে, শিল্পে, এবং মাটিতে।

তথ্যসূত্র ও টীকা


[১] নজরুল রচনাবলীর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সংকলন: শ্রেষ্ঠ নজরুল, আবদুল মান্নান সৈয়দ সংকলিত ও সম্পাদিত, অবসর প্রকাশনা সংস্থা, ঢাকা, ১৯৯৬।

[২] কবিতাটি আমি দেখে নিয়েছি উইকিসংকলনে (২৪/৭/১৩-তে):  http://bn.wikisource.org/wiki/সভ্যতার_প্রতি

[৩] নজরুলের ‘রাঙা মাটির পথে লো’ গানটার সুর ও কথা থেকে এটি যে ‘সাঁওতালি’ ঘরানার, এ ব্যাপারে আমার অনুমানের সমর্থন আমি পেয়েছি অনুপ সাদির ব্লগে ‘বাংলা গানে সাঁওতালি সুর’ (জুলাই ১, ২০১৩) শীর্ষক একটা পোস্ট থেকে, http://anupsadi.blogspot.com/2013/07/blog-post.html, যার সন্ধান অন্তর্জালে পাই ২৪/৭/১৩ তারিখে।

[৪] এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে আমি একটা নোট দিয়েছিলাম, ‘সরকারি সংগ্রহশালা কি হতে যাচ্ছে আদিবাসীদের ঐতিহ্যের শেষ গন্তব্য?’ শিরোনামে (জুলাই ৯, ২০১৩), যা পরে একটি ব্লগে দেওয়া হয়েছে: http://chtbd.org/?p=2041

[৫] এম এ মোমেন, ‘জীবিত ভাষার মরণযাত্রা: বহু ভাষার বাংলাদেশ’, প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১২

[৬] ‘ইন্টারনেট’-এর পারিভাষিক বাংলা প্রতিশব্দ ‘অন্তর্জাল’ হবে, নাকি ‘আন্তর্জাল’, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গুগল সার্চের ভিত্তিতে প্রথমটার দিকেই পাল্লা ভারী মনে হয় (৩:১ অনুপাতে)। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা কোনটাকেই যথার্থ বা ব্যাকরণসম্মত মনে করেন না। আমি এসব যুক্তিতর্কের কোনটার মূল্যায়নে না গিয়েই ‘অন্তর্জাল’ শব্দটাকে বেছে নিয়েছি, এর ধ্বনিগত দ্যোতনা আমার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে জুতসই মনে হওয়াতে।

[৭] ‘চাকমা উপন্যাস চাই’ নামের লেখাটা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’তে আছে, যার প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স।

[৮] শ্রদ্ধাঞ্জলি নয় এই স্মরণ বরং প্রতিবাদ হিসাবেই গণ্য হোক, ফারুক ওয়াসিফ (৪ জানুয়ারি ২০১০), http://nirmaaan.com/blog/faruk-wasif/5808

[৯] সাইমন জাকারিয়া (আগস্ট ২০০৮) বাংলাদেশে নিও-এথনিক থিয়েটার চর্চার পথিকৃৎ,
http://glitz-us.bdnews24.com/details.php?catry=%2715%27&showns=128

[১০] মামুনুর রশীদ, নাটক সমগ্র ৩, নালন্দা (২০১৩) http://www.porua.com.bd/books/নাটকসমগ্র-৩

6 thoughts on “অরণ্য থেকে অন্তর্জালে, রাঙা মাটির পথ থেকে রাজপথে

  1. kubaleshwar tripura

    ভালো লাগলো এই ব্লিশেষনধমী সুচিন্তিত লেখাটি পড়ে । প্রকাশিতন্নবাদ হলে আমাকে জানিও সংগ্রহে রাখবো।। ধন্যবাদ…।।

    1. Prashanta Tripura Post author

      ধন্যবাদ কুবলেশ্বর। যদি আমার এ ধরনের লেখাগুলোর কোন সংকলন বই আকারে বের হয়, জানাব অবশ্যই। তবে কাগজে বই ছাপা মানেইতো বনবিনাশে একটু হলেও অবদান রাখা – তাই তা করার মত যৌক্তিকতা বা অন্য কোন বিকল্প আছে কিনা, আগে একটু তলিয়ে দেখব।

    1. Prashanta Tripura Post author

      ধন্যবাদ আপনাকে। কোথায় ছাপাতে চাচ্ছিলেন? আপনার ব্লগে? আসলে এই লেখাটা একটা ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছিলাম, যেমনটা উল্লখে করা আছে। ওটার সম্পাদকের সাথে আলাপ করেই লেখাটা নিজের ব্লগে দিয়েছি, তবে আর কোথাও ছাপতে দেওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না। সুযোগ পেলে অন্য কোন লেখা না হয় দেব আপনার ওখানে, তার আগে আমিও একটু পরিচত হই আপনার ব্লগ সম্পর্কে?

  2. Diponkar Tripura

    অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের খোলা চিঠি পড়তে গিয়ে অরণ্য থেকে অন্তর্জালে,রাঙ্গামাটির পথ থেকে রাজপথে লেখাটি ও পড়লাম। বিশ্লেষণধর্মী, তথ্যভিত্তিক, যুক্তিনির্ভর লেখা। ধন্যবাদ কাকা।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান